
রংপুর নগরীর খামার এলাকায় দেশী জাতের হাঁস-মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৫৭ সালে স্থাপন করা হয় সরকারি হাঁস-মুরগির খামার। ১০ একর জমির ওপর নির্মিত এ খামারে ১৯টি শেড রয়েছে। নির্মাণের পর থেকে সংস্কারের মুখ দেখেনি খামারটির শেডসহ অন্যান্য ভবনগুলো। যার ফলে প্রতিবছর বৃষ্টি অথবা বন্যার সময় শেডে পানি ঢুকে দেখা দেয়ে জলাবদ্ধতা। গত বছর সেপ্টেম্বরের বন্যায় শেডে পানি ঢুকে প্রায় দুই হাজার মুরগি মারা যায়। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এরই মধ্যে পাঁচটি শেড পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বাকি শেডগুলোর অবস্থাও নাজুক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে খামারটি পরিচালিত হতো। ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে খামারটি পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ফাওমি জাতের লেয়ার এবং আরআইআর জাতের মোরগের ক্রসের মাধ্যমে সোনালি মুরগি উৎপাদন করা হয়। সাড়ে পাঁচ মাস বয়স থেকে সোনালি মুরগি ডিম দেয়া শুরু করে। একটি মুরগি ১৮০-২২০টি ডিম দেয়। বর্তমানে পর্যাপ্ত শেড না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হচ্ছে মুরগি। পাশাপাশি খামারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পুরনো ভবনে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, মুরগি রাখার ১৯টি শেডের মধ্যে পাঁচটি শেড ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগে। ভালো শেডগুলোও পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় মুরগির বায়ো সিকিউরিটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া শেডগুলো অনেক আগে নির্মিত হওয়ায় শেডের মেঝে এবং সামনের ফাঁকা জমির উচ্চতা প্রায় সমান। এদিকে, ড্রেন না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যা-পরবর্তী সময় খামারের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। অনেক শেডের নিচে ইঁদুর বাসা বেঁধেছে। এছাড়া কোথাও কোথাও সীমানা প্রাচীর অনেক নিচু হওয়ায় প্রায়ই বহিরাগতদের অনাকাক্সিক্ষত প্রবেশ ঘটছে। খামারের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মিত ভবনটিও অনেক পুরনো হওয়ায় ছাদ এবং দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে খামার কর্তৃপক্ষ একটি আধুনিক হাঁস-মুরগি খামার ভবন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে আবেদন করেছে। ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে। কিন্তু তার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, দেশীয় মুরগির জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণে খামারটি নিরলস কাজ করছে। কিন্তু এর অবকাঠামো সেই পাকিস্তান আমলে তৈরি। তাই এটির আধুনিকায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, দ্রæত এর ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে অনেক কর্মহীন যুবকের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতে বৈশ্বিক মহামারী করোনায় এ অঞ্চলের অনেকে তাদের চাকরি হারিয়ে বর্তমানে নিজ এলাকায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এ অবস্থায় কর্মসংস্থার সৃষ্টিতে খামারটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারি হাঁস-মুরগি খামারের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ ডা. মো. নাজমুর হুদা বলেন, খামারের ফাঁকা স্থান ও শেডের উচ্চতা সমান হওয়ায় বৃষ্টি ও বন্যার সময় পানি ভেতরে ঢুকে যায়। এজন্য বন্যার সময় খামারের অনেক মুরগি মারা যায়। খামারের অবকাঠামো সংস্কারে এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। দ্রæত খামারটি আধুনিকায়নে কার্যক্রম শুরু হবে। খামারটির আধুনিকায়নের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে এলজিইডির প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি করে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।