
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি অনেকে। পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের ২০ কেন্দ্রে শতাধিক ভোটার ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে প্রথমবার ইভিএমে ভোট প্রদান করেন ভোটাররা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হলেও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের আগে উপস্থিত থেকেও আঙুলের ছাপ না মেলায় বিড়ম্বনায় অনেকেই ভোট দিতে পারেননি।
পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের হারাগাছ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রায় অর্ধশত ভোটার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আঙুলের ছাপ জটিলতায় চরম ভোগান্তির শিকার হন বলে দাবি করেন। অনেকেই ভোট দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান।
কাউন্সিলর প্রার্থী আসাদুল ইসলাম লিটনের (পানির বোতল প্রতীক) পোলিং এজেন্ট মেহেরুল ইসলাম ভোট দিতে পারেননি দাবি করে বলেন, সকাল থেকে কেন্দ্রে রয়েছি। পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করলাম। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করেও আঙুলের ছাপ না মেলায় নিজের ভোটটা দিতে পারিনি। এ ব্যাপারে প্রিসাইডিং অফিসারকে বহুবার বলেও কোনো সমাধান হয়নি। কষ্ট হচ্ছে আঙুলের ছাপ বিড়ম্বনায় ভোট দিতে পারলাম না।
একই অভিযোগ করেন হারাগাছ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার ইলিয়াছ মিয়া, গোলজার হোসেন, নুরুজ্জামান, আব্দুল হান্নান, আব্দুল হাই মিয়া, আব্দুল গফুর মিয়াসহ আরও অনেকেই।
ভোট দিতে না পেরে ভোটার নুরুজ্জামান বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার সময় এসে ফিঙ্গার ম্যাচিং সমস্যার ফিরে গিয়েছি। তখন প্রিসাইডিং অফিসার দুপুরের দিকে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ভোট দিতে পারলাম না।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হুমায়রা খাতুনের (আনারস প্রতীক) পোলিং এজেন্ট আসিফ রহমান অভিযোগ করেন, তার বুথে (কক্ষ নং-১) মোট ২৯৭ জন ভোটারের মধ্যে ১৮২ জন ভোট দিতে পেরেছেন। বাকিরা আঙুলের ছাপ জটিলতার কারণে ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
হারাগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কয়েকজন নারী ভোটারও আঙুলের ছাপ জটিলতার কারণে ভোট দিতে পারেননি। সেখানকার ভোটার আছিয়া বেগম বলেন, বিকেলে বাড়ির কাজ শেষ করে বিকেল ৩টার দিকে কেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু মেশিনে আঙুলের ছাপ মেলেনি। এজন্য আমাকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি।
এ ধরণের অভিযোগ ২০টি কেন্দ্রের অনেক ভোটারই করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের দাবি, ইভিএম পদ্ধতিতে হারাগাছে প্রথমবার ভোট হওয়াতে অনেকের বুঝতে সমস্যা হয়েছিল। সেই সমস্যা কাটাতে ভোটারদের ভোট প্রদানের নিয়ম দেখানো হয়। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অনেকেই ভোট দিতে এসে কেন্দ্রে ঢুকতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
এ ব্যাপারে হারাগাছ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুল হামিদ সরকার বলেন, আমরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্ধারিত ৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে আসা সবাইকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু বিকেল ৪টার দিকে যদি কেউ এসে ভোট দিতে চায়, সেটা তো সম্ভব না। তবে কয়েকজনের আঙুলের ছাপ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।
হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাকিবুর রহমান মাস্টার (নৌকা), বিএনপির মোনায়েম হোসেন ফারুক (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী জাহিদ হোসেন (হাতপাখা) এবং আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদুল হক এরশাদ (নারকেল গাছ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এছাড়াও নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর (পুরুষ) পদে ৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এখানে মোট ভোটার ৪৯ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ২৫ হাজার ৩২৪ এবং পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৬৯৩ জন৷