
কেউ থাকেন অন্যের বাড়ীতে, কেউবা খাস জমিতে, কেউ আবার রাত কাটান রেল স্টেশন বা খোলা আকাশের নিচে। এমন চিত্র হরহামেশাই দেখা যায় দেশজুড়ে।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার অনেক অসহায় মানুষ এখনও রাত কাটান অন্যের জমিতে। এরকম গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করতে তৈরী করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঘর।
নতুন বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেতে যাচ্ছেন “জমি নেই, ঘর নেই” এমন ১৪১টি পরিবার। এ মাসের (২০ জানুয়ারি-২০২১) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অসহায় এই দরিদ্র পরিবারগুলোর হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে চাবি হস্তান্তরের মধ্যে উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলাটিতে মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণীর দরিদ্র পরিবারের বাসস্থান নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর এ বিশেষ উদ্যোগ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধায়ন করেছেন পুরো প্রকল্পের নির্মাণ কাজের। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৪১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে গোলনায় ২৭টি, মীরগঞ্জে ২৬টি, শিমুলবাড়ীতে ২৬টি, কৈমারীতে ৪১টি, শৌলমারীতে ১৫টি, ধর্মপালে ১২টি। প্রতিটি ঘরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে দুটি শয়নকক্ষ এছাড়াও থাকছে একটি করে বারান্দা, রান্নাঘর ও বাথরুম।
স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। এখনই উল্লাসিত ও আনন্দিত এসব অসহায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত পরিবারগুলো। সরেজমিনে খারিজা গোলনা ও চিড়াভিজা গোলনায় নবনির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প দেখতে গেলে কথা হয় শেফালি, ফুলেশ্বরী, মতিরোন বেগমসহ কয়েকটি পরিবারের সাথে। যারা কিছুদিনের মধ্যেই স্বপ্নের এই ঠিকানায় সারথী হবেন।
তারা বলেন, বৃদ্ধ মা-বাবা ও সন্তানদের নিয়ে রাত্রীযাপনের জন্য ভাংগাচুরা ঝুপড়ি ঘরে থেকেছি অনেকদিন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ১০টাকা কেজি দরে চাল দিয়ে সংসার চলছে। এছাড়াও তিনি আমাদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন। এবার উনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা) ঘর দিচ্ছেন।
উনি যেন আমাদের মায়েরই দায়িত্ব পালন করছেন। এসময় তারা আরও বলেন, অনেকের স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর পরিবারে অন্য সদস্যদের নিয়ে অন্যের জমিতে গড়া ছোট ঘরে কোনরকম মাথাগুজার ঠাই হয়েছিল। অনেকে আবার অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে সবার অন্ন যোগানের দায়িত্বটাও নিতে হয়েছিল।
তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়ে আপ্লুত এই নারীরা। প্রথম ধাপে উপজেলাটিতে এ অসহায় পরিবারগুলোর মত ১৪১ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ পাচ্ছেন এই স্বপ্নের ঠিকানা। তাই দীর্ঘদিন পর কাঙ্খিত ঠিকানা পাওয়ার উচ্ছ্বাস সবার মনে।
সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার জন্য। দৃষ্টিনন্দন রঙে সজ্জিত এ ঘরগুলো যেন গৃহহীন অসহায় মানুষের স্বপ্ন পূরণের সারথী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই ঘরগুলো হস্তান্তর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছিল যা ইতিমধ্যে সমাপ্তির পথে।
এসব আশ্রয়ন শিবিরে মসজিদ ও কবরস্থানের পাশাপাশি কমিউনিটি সেন্টার তৈরীসহ বাড়তি কিছু সুবিধা যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি যেন অসহায় দরিদ্র মানুষের স্বপ্নের ঠিকানায় পরিণত হয়েছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০ জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সর মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে চাবি হস্তান্তর করবেন।