
আসসালামুয়ালাইকুম। নিজের পরিচয় প্রথমে আর দিয়ে কি লাভ! আপনাকে, আমাকে, সবাইকে তো একি কূপের মধ্যেই ফেলে রাখা হয়েছে। আজকের শব্দগুলো সেই সব বাস্তবতার উপরেই লেখা।
১৮ মার্চ ২০১৯ থেকে প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছিল। প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২৮ অক্টোবর ২০১৯। সেকেন্ড সেমিস্টারের ক্লাস শুরুর নির্ধারিত তারিখ মনে নেই। কিন্তু প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট আজ অবধি অপ্রকাশিত। ২য় সেমিস্টারের ক্লাসও ঠিকমতো শেষ ও হয় নাই; নিজেদের পড়ে নিতে বলছে। খুবই ভালো কথা। আজকে ৭ ডিসেম্বর যাচ্ছে, আর এখন পর্যন্ত আমরা কোন ধরনের পড়াশোনা বিষয় কোন খবর, সহায়তা, কিচ্ছু পাইনি।
অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে নানা অজুহাত দিয়ে প্রশাসন উদাসীন। ডির্পাটমেন্ট তো আমাদের পড়ালেখা নিয়েই উদাসীন। তিন মাস পরে আমাদের ওরিয়েন্টশনের দুই বছর হবে। আর আমরা প্রথম বর্ষই শেষ করতে পারিনি। এদিকে তারা নতুন বর্ষবরণ করে নিলো।
অনলাইন ক্লাসটা যদি নতুন সেমিস্টারে অন্তত শুরুও হয়ে থাকতো; তাহলেও আমরা এক ধাপ একটু পেছন থেকে এগিয়ে থাকতাম। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি সেই শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাই যেখানে অনুপস্থিত, শিক্ষার্থীরা শক্তি হবে কীভাবে? আমরা প্রতিবাদও করতে পারি না। আমাদের নিজেদের মধ্যে সেই অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের দিয়ে কি হবে যারা কোনকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পাস করে বের হয়ে? ফ্যামিলিকে দুই মুঠো ভাত খাওয়ানোর স্বপ্ন দেখে? কিসের স্বপ্ন?
What is the meaning of our logo? ‘জ্ঞান ই শক্তি’। আদৌ কি সেই শক্তি আছে সবার? আজও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলে মানুষ নাক সিঁটকায়। কেন, দোষ কাদের? আমার, আপনার? না এই অনুষদ না এই প্রশাসন? আমাকে কেউ বলেছিল ঔদ্ধত্য পূর্ণ আচরন ভালো কিছু নিয়ে আসে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরও তাই।
আমি আজ প্রতিবাদ করলেও দুইদিন মাতামাতি হবে। তারপর? সেই বিষন্নতা ভরা স্ট্যাটাস, কে জানে কে কোনদিন দড়িতে ঝুলে পড়বে আর সেইটা নিয়ে আমাদের ডির্পাটমেন্ট শোক প্রকাশ করবে! প্রশাসন শোক প্রকাশ করবে আরে আমরাই কি মোমবাতি জ্বালাবো না? আর যেখানে মানসিকভাবে অত্যাচারের জন্য আমরাই প্রতিজন দায়ী। একটা বিশ্ববিদ্যালয়েকে আমরা কিছু দিয়ে নাম করবো কীভাবে? যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাদের ফেলায় রাখে আর্বজনার মতো।
উত্তর চাই না, কমিটি চাই না, ফুলে ভরা পরিস্কার সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি চাই না, শিক্ষা চাই। সেই শিক্ষা দিতে কি সক্ষম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়? ‘না’। জোর গলায় বলতে হচ্ছে ‘না’। লজ্জা করা উচিত এই প্রশাসনের, যে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এসে, এতটা ঘৃণাভরা আক্ষেপ নিয়ে এতটা বিশ্বাসের সাথে বলতে পারছি, পারবে ‘না’।
আর আমাদের মাঝে এতটা সততাও নেই, যে আপনারা আমাদের সুদূর সুন্দর ভবিষ্যৎ-এর কথা দিবেন। পরিবর্তন যথাসময়ে নিয়ে আনুন। না হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে পা আর কোন শিক্ষার্থী ফেলবে না, শুধু দালান আর গাছ থেকে যাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ১১তম ব্যাচ, ইংরেজি বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়